রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি॥ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে টিনশেড ছোট একটি ঘরে বন্দি আল আমিন (৩০)। তার ঘরের বাহিরে বের হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘরের বাইরে বের করার সাহস পান না।
আল আমিন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচআনি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম হাওলাদারের ছেলে।
আবুল কালাম বলেন, মাদ্রাসায় লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল আল আমিনের। তিনি নিয়মিত পড়াশুনা করে ভালো একটা অবস্থান তৈরিও করেছিলেন। প্রায় ১১ বছর আগে আলীম শেষ বর্ষের পড়া অবস্থায় তার অস্বাভাবিকতা শুরু হয়। মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ মারধর করতেন তিনি। মাদ্রাসা থেকে বিষয়টি জানানো হলে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বাড়িতে আনার পর মাসহ পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে যাকে কাছে পায় তাকেই মারধর করতেন আল আমিন।
তিনি বলেন, আল আমিনের এমন অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়ার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরবর্তীতে পাবনা মানসিক হাসপাতালেও ভর্তি করা হয় আল আমিনকে। সেখানে বছরখানেক চিকিৎসা দেওয়ার পর আল আমিন সুস্থ হয়ে উঠলে বাড়িতে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বাড়িতে আসার পর আবারো আল আমিন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয় এর চেয়ে আল আমিনের আর ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আল আমিনকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ তার রেগে ওঠা এবং মানুষের ওপর হামলা চালানোর কারণে তাকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
জমি বিক্রি করে আল আমিনকে বর্তমান ঘরটি তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে আবুল কালাম হাওলাদার বলেন, অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে বর্তমানে তিন বেলা আহার জোটানো কষ্টকর। সেখানে সন্তানের ওষুধ সেবন করানোটা তো দুঃস্বপ্ন।
তিনি বলেন, ঢাকায় ব্যবসা করতাম। ছেলের শোকে আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে ছয় বছর আগে মারা গেছেন।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর আল আমিনকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জানিয়ে আবুল কালাম বলেন, বড় ও মেঝ ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক চালক। ছোট ছেলে ঢাকায় স্বল্প আয়ের ব্যবসা করেন। বর্তমানে সন্তানদের আয় না থাকায় তেমন খোঁজ নিতে পারছেন না তারা।
তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে আল আমিনকে ঘর থেকে বের করা হলে নজর রাখতে হতো। কিন্তু তার যে কোনো স্থান চলে যাওয়া এবং গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালানোর প্রবণতা থাকায় এখন আর ঘর থেকে বাহিরে বের করতে সাহস পাই না।
ঘরে বন্দি অবস্থায় থাকা আল আমিন বলেন, এভাবে বন্দি থাকতে ভালো লাগছে না। পরিবারের সদস্যরা বন্দি করে রেখেছেন। এখন তিনি মুক্ত হতে চান।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতেমা বলেন, কিছুদিন আগে আমি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। এ কারণে বিষয়টি আমার নজরে নেই। তবে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ বিষয়ে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply